সেনসেক্স-নিফটি নিম্নমুখী, উইপ্রোর শেয়ারে পতন

ভারতীয় শেয়ারবাজার আজকের দিনটি নিস্তেজভাবে শুরু করেছে। বৈশ্বিক বাজারে দুর্বল সেন্টিমেন্ট এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতার ফলে বাজারে পতনের ধারা দেখা যায়। বাজার…

ভারতীয় শেয়ারবাজার আজকের দিনটি নিস্তেজভাবে শুরু করেছে। বৈশ্বিক বাজারে দুর্বল সেন্টিমেন্ট এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতার ফলে বাজারে পতনের ধারা দেখা যায়। বাজার খোলার পরপরই বিএসই সূচক সেনসেক্স (Sensex ) ১১৯.৬০ পয়েন্ট বা ০.১৬% কমে দাঁড়ায় ৭৬,৬১৫.২৯-এ। অন্যদিকে, এনএসই-র নিফটি৫০ সূচক ৩৬.৩৫ পয়েন্ট বা ০.১৬% কমে পৌঁছায় ২৩,২৯২.২০-এ।

বাজারের মিশ্র প্রবণতা

বিএসই-তে মোট ৮০৯টি শেয়ারের দাম বেড়েছে, ৪৩১টি শেয়ারের দাম কমেছে এবং ৯৭টি শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত থেকেছে। এই পরিসংখ্যান বাজারের মিশ্র প্রবণতাকেই তুলে ধরে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক বাজার চাঙ্গা থাকার পরে বিনিয়োগকারীরা এখন লাভ ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। সেইসঙ্গে বৈশ্বিক স্তরে নানা অনিশ্চয়তা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার জেরে বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে।

ব্যাংকিং ও আর্থিক শেয়ার রইল চাঙ্গা

নিফটির শীর্ষ গেইনার তালিকায় স্থান পেয়েছে শ্রীরাম ফাইন্যান্স, ইন্ডাসইন্ড ব্যাংক, অ্যাপোলো হাসপাতালস, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংক এবং অ্যাক্সিস ব্যাংকের মতো শেয়ারগুলি। মূলত ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের এই শেয়ারগুলির ভালো পারফরম্যান্স কিছুটা হলেও বাজারের ক্ষতি সামাল দিতে সাহায্য করেছে।

আইটি ও অটো খাতে চাপ

অন্যদিকে, প্রযুক্তি এবং অটোমোবাইল খাতে বিক্রির চাপ স্পষ্ট। নিফটির শীর্ষ লুজার তালিকায় ছিল ইনফোসিস, মারুতি সুজুকি, টেক মাহিন্দ্রা, টাটা কনজিউমার প্রোডাক্টস এবং সিপ্লার মতো শেয়ারগুলি। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা বেড়েছে আসন্ন ফলাফল এবং আন্তর্জাতিক মন্দার আশঙ্কার প্রেক্ষিতে।

বৈশ্বিক বাজারে দুর্বলতা

বিশ্ববাজারেও একই রকম দুর্বলতা দেখা গিয়েছে। সোমবার আমেরিকার শেয়ারবাজারগুলি নিম্নমুখী অবস্থানে দিন শেষ করেছে। ডাও জোন্স সূচক ০.৩৮% কমে বন্ধ হয় ৪০,৩৬৮.৯৬ পয়েন্টে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ০.১৭% হ্রাস পেয়ে পৌঁছায় ৫,৩৯৬.৬৩ পয়েন্টে এবং ন্যাসড্যাক কম্পোজিট ০.০৫% কমে বন্ধ হয় ১৬,৮২৩.১৭ পয়েন্টে।

তদুপরি, ফিউচার মার্কেটেও নেতিবাচক সেন্টিমেন্ট বজায় রয়েছে। ডাও জোন্স ফিউচারস ০.৫% কমেছে, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচারস ০.৯% এবং ন্যাসড্যাক ১০০ ফিউচারস ১.৫% হ্রাস পেয়েছে।

এশিয়ার বাজারেও নিম্নগামী প্রবণতা:

এশীয় বাজারগুলির চিত্রও খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ০.৩৩% হ্রাস পেয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার কসপিআই সূচক ০.২৯% এবং হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক ১.০১% পড়েছে। চীনের সিএসআই ৩০০ সূচকও ০.৮৭% কমেছে।
তবে অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক ০.১৭% বৃদ্ধি পেয়ে কিছুটা স্বস্তির বাতাবরণ তৈরি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী কয়েক দিনে বাজারের গতিপথ অনেকটাই নির্ভর করবে কর্পোরেট ফলাফলের উপর। আজই বাজার বন্ধের পরে ভারতের অন্যতম আইটি সংস্থা উইপ্রোর ত্রৈমাসিক ফলাফল ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এই ফলাফলের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন।
সেইসঙ্গে, আমেরিকার সম্ভাব্য নতুন শুল্ক নীতি, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান বাজারের উপর প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, ভারতীয় শেয়ারবাজারে আজকের নিস্তেজ সূচনা মূলত বৈশ্বিক বাজারের দুর্বলতা, মুনাফা তোলার প্রবণতা এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে। তবে কিছু ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের শেয়ার বাজারকে কিছুটা সমর্থন দিয়ে চলেছে। আগামী দিনে কর্পোরেট ফলাফল এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি কী বার্তা দেয়, তার উপর নির্ভর করেই বাজারের পরবর্তী দিক নির্ধারিত হবে।